হাসতে হাসতে কি মরে যাওয়া সম্ভব?

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭৫ সালের ঘটনা। একদিন ইংল্যান্ডের নরফোল্কের ৫০ বছর বয়সী অ্যালেক্স মিশেল টেলিভিশনে তার সবচেয়ে পছন্দের কমেডি সিরিজ 'দ্য গুডিজ' দেখছিলেন। অভিনেতা বিল ওডির অভিনয় দেখে মিশেল হাসতে শুরু করেন।

প্রথমে স্বাভাবিকভাবে হাসলেও ধীরে ধীরে তিনি উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করেন এবং কিছুতেই তার হাসি থামছিল না। এক পর্যায়ে চেয়ার থেকে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন এবং কিছুক্ষণ পর মারা যান। মিশেলের মৃত্যু তখন বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়।

তার স্ত্রী নেসির দেওয়া তথ্যমতে, টানা অন্তত ২৫ মিনিট হাসছিলেন মিশেল।

নেসি বলেন, 'এটা অবিশ্বাস্য। ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন, মিশেলের হৃৎপিণ্ডের বাঁ দিকটা অকেজো হয়ে গিয়েছিল। হাসিটা তার জন্য বেশি হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার আমাকে বলেছিল, এটা যে কারো সঙ্গেই হতে পারে।'

 

 

তাহলে সত্যিই কি অতিরিক্ত হাসিতে মারা যাওয়া সম্ভব?

অতিরিক্ত হাসিতে কেউ সাধারণত মারা যায় না। তবে মাত্রাতিরিক্তি হাসি শরীরে আগে থেকে বিদ্যমান অন্য কোনো রোগের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

২০১৯ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম গিজমোডো বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চায়। গিজমোডো যেসব বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জর্জ অ্যান্টোনিও গুতিয়েরেজ।

অতিরিক্ত হাসির কারণে কারো মৃত্যু হতে পারে— মোটাদাগে ডাক্তার গুতিয়েরেজ এই দাবি খারিজ করে দেন।

তিনি বলেন, 'কারো যদি অ্যাওর্টিক অন্যুউরিজম (রক্তনালীর ফোলা ও দুর্বল অবস্থা)  থাকে, তাহলে হাসি তার ইনট্রাথোরাসিক প্রেশার বাড়িয়ে দিতে পারে। এই প্রেশার আমাদের ভাস্কুলার সিস্টেমেও ছড়িয়ে পড়ে এর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে এটা বলা যাবে না যে হাসির কারণেই মৃত্যু হয়েছে। হাসিটা এখানে উপলক্ষ মাত্র। হাসির সময় কারো হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। যে কারোরই অবশ্য হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।'

ডাক্তার গুতিয়েরেজ বলেন, তার জানামতে মাত্র ১ জনই এ পর্যন্ত অতিরিক্ত হাসির সময় মারা গিয়েছেন। তবে ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিও এমন এক রোগে চিকিৎসাধীন ছিলেন, যা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের কারণ হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ একটানা হাসলে অবশ্য অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে।

অতিরিক্ত হাসি শরীরের বিভিন্ন সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। ভোকাল কর্ড দিয়ে অক্সিজেন পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া এহেলারস-ড্যানলস সিন্ড্রোম বা যোজক টিস্যুর বিভিন্ন সমস্যা চাঙা হয়ে উঠতে পারে, যা শরীরের রক্তচাপকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে শুধু যে হাসির কারণেই এসব হয়, তা না। দম অনেক্ষণ আটকে রাখলেও এগুলো হতে পারে।

অতিরিক্ত হাসির কারণে মৃত্যু যদি এতটা ব্যতিক্রম ও বিরল ঘটনা হয়, তাহলে মিশেলের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল?

২০১২ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিশেল সম্ভবত কিউটি সিনড্রোমে (QT Syndrome) ভুগছিলেন। এটি হৃৎপিণ্ডের ইলেক্ট্রিক্যাল ব্যবস্থার একটি জটিল সমস্যা। এই সমস্যাটি পারিবারিকভাবেও কারো মধ্যে আসতে পারে। যেমন ২০১২ সালে মিশেলের এক নাতনি এই রোগের চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

বিবিসি অবশ্য নিশ্চিত করে বলেনি যে এই সমস্যার কারণেই মিশেল মারা গেছেন।

তথ্যসূত্র: মেন্টালফ্লস

Comments

The Daily Star  | English

JnU protests called off

Students and teachers of Jagannath University called off their protest last night after receiving assurances from the government that their demands would be met.

1h ago