এখন থেকে রপ্তানি-খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে: গভর্নর

ব্যাংক থেকে একদিনে তোলা যাবে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রপ্তানি ও খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য এখন থেকে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধনের এক সপ্তাহ পর গভর্নর এই মন্তব্য করেন।

এর আগে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানির প্রকৃত আয় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার কম।

তথ্যের গড়মিলের এমন চিত্র অনেককে অবাক করে।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, 'রপ্তানির তথ্য সংশোধন করা হয়েছে। এখন থেকে রপ্তানির সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হবে।'

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, 'ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে প্রকৃত খেলাপি আড়ালের চেষ্টা হয়েছে। আমরা তা চাই না। আমরা চাই সত্যটি সামনে আসুক।'

গভর্নরের বরাত দিয়ে বৈঠকের এক সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছে।

গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধে মুদ্রানীতিন প্রস্তুতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় গভর্নর এ কথা বলেন।

গভর্নরের ভাষ্য, ২০২২ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগদানের পরপরই তিনি ইপিবির রপ্তানির পরিসংখ্যান ও প্রকৃত রপ্তানির মধ্যে পার্থক্য দেখতে পান।

তার দাবি—তিনি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন। উল্লেখযোগ্য সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও রপ্তানিকারকরা দেশে রপ্তানির টাকা ফেরত আনছেন না।

'এরপর আমরা এই পার্থক্যের আসল কারণ খুঁজে বের করি,' যোগ করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয় ধরনের পরিসংখ্যানগত ভুল ধরেছে। এই ভুল তথ্য রপ্তানির পরিমাণকে বাড়িয়ে দিয়েছে। হিসাবে অসঙ্গতিগুলো মধ্যে আছে কাপড়ের দামের ভুল গণনা থেকে শুরু করে রপ্তানি হিসাবে নমুনা পণ্যগুলোর বারবার ভুল গণনা।

প্রকৃত রপ্তানি আয়ের হিসাব পেতে ইপিবি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে নতুন গণনা পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

সরকার তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত ও নীতিমালা প্রমাণ-ভিত্তিক করতে রপ্তানির রিয়েল-টাইম ডেটা প্রকাশের জন্য প্ল্যাটফর্ম করার উদ্যোগ নিয়েছে।

পরিকল্পিত প্ল্যাটফর্মের আওতায় এনবিআর দৈনিক রপ্তানি তথ্য ইপিবিকে দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিয়েল-টাইম বিনিময় হারের ভিত্তিতে এটি গণনা করবে।

২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ শতাংশ।

শুল্ক বিভাগ টাকায় রপ্তানির পরিমাণের পরিসংখ্যান পাঠায়। ইপিবি তা ডলারে রূপান্তর করে।

গভর্নর বলেন, 'এখন আমরা প্রকৃত পরিসংখ্যান পাব।'

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়েছে, যাতে তারা খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ জানায়।

গত মার্চে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ প্রায় ১১ শতাংশ ঋণ খেলাপি।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, 'বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানত থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়। অন্যান্য দেশের বড় ঋণগ্রহীতারা তহবিল পেতে পুঁজিবাজারে যান।'

গভর্নর বলেন, 'বাংলাদেশে দুটোই আছে। এ থেকে বের হতে না পারলে খেলাপি কমানো কঠিন।'

খেলাপি ঋণ কমাতে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ শতাংশ।

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনতে আবারও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দ্রব্যমূল্যের চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলেও তাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল নয় দশমিক ৭৩ শতাংশ। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো তা নয় শতাংশের বেশি।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা, ব্যবসায়ী, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

2h ago